ডিম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ অন্যতম একটি প্রাকিতিক খাদ্য। একটি সম্পূর্ণ ডিমের মধ্যে একটি একক কোষকে মুরগিতে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান থাকে।
একটি বড় সিদ্ধ ডিমের মধ্যে ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৫, ভিটামিন বি-১২, ফসফরাস, ভিটামিন বি-২ এবং সেলেনিয়াম রয়েছে। এছাড়াও ডিমে ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম এবং জিংক পর্যাপ্ত পরিমণে রয়েছে। ডিমে শুধুমাত্র ভিটামিন সি বাদে প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান থাকে।
ডিমের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ খুব বেশি। প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড মানব দেহের প্রধান বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে। তারা জীবদেহের সব ধরনের টিস্যুগুলো তৈরিতে গঠনগত এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া দেহের ওজন হ্রাস, পেশীর ভর বৃদ্ধি, উচ্চরক্তচাপকে হ্রাস এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিমের মধ্যে রয়েছে লুটেইন এবং জেক্সান্থিন, এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টিশক্তি আরও খারাপ হতে থাকে। তবে বেশ কয়েকটি পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা এই ডিজেনারেটিভ প্রক্রিয়াটিকে প্রতিহত করতে পারে। এর মধ্যে দুটি হল লুটেইন এবং জেক্সান্থিন, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের রেটিনার গড়ন সাধন করে।
গবেষণায় দেখা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে এই পুষ্টি উপাদানগুলো চোখের ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, যা চোখের দুটি সাধারণ রোগ।
ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে লুটেইন এবং জেক্সান্থিন থাকে। এক পরীক্ষায় দেখা যায়, সাড়ে চার সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন মাত্র ১.৩ ভাগ ডিমের কুসুম খাওয়াতে রক্তে লুটেইনের পরিমাণ ২৮ থেকে ৫০ শতাংশ এবং জেক্সান্থিন ১১৪ থেকে ১৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভিটামিন এ ডিমে বেশি থাকে। যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আমরা সকলেই জানি পৃথিবীতে অন্ধত্বের অন্যতম একটি কারণ হল ভিটামিন এ এর অভাব।
৩০ জন অতিরিক্ত ওজনের মহিলাদের নিয়ে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্রেকফাস্ট এর জন্য ব্যাগেলের পরিবর্তে ডিম খাওয়াতে তাদের ক্ষুধার পূর্ণতার অনুভূতি বেড়েছে এবং যা পরবর্তী ৩৬ ঘন্টার জন্য তাদের কম ক্যালরি খেতে বাধ্য করে।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, ব্রেকফাস্ট এ ব্রেডের পরিবর্তে ডিম খাওয়াতে ৮ সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন হ্রাস পেয়েছে।
একটি দেশি মুরগির ডিমের ওজন সাধারণত ৩৫-৪০ গ্রাম এবং ফার্মের মুরগির ডিমের ওজন ৫৫-৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা দেশি মুরগির ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি। যা মোটেও সঠিক নয়। দেশি মুরগির ডিমের ওজন কম হওয়াতে পুষ্টি উপাদানও সেখানে তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
মোঃ নাজমুল ইসলাম লিজান
ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
ময়মনসিংহ - ২২০২
তথ্যসূত্রঃ
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/10426702/
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/16373948/
https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/18679412/
No comments