গাভীর ম্যাসটাইটিস রোগ
আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষের অর্থ উপার্জনের মূল উৎস হল গাভীর দুধ বিক্রি করা। গাভীর অনেক ধরনের রোগ গুলোর মধ্যে অত্যন্ত কমন ও ক্ষতিকর একটি রোগ হল গাভীর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগ।
এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন ওলান ফোলা রোগ, ওলন পচাঁ রোগ, ওলন পাকা রোগ, ঠুনকো রোগ, থানফুলা, থানপাকা, পালান পাকা রোগ ইত্যাদি।
গাভীর ওলানের প্রদাহকে গাভীর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগ বলে। ওলানের প্রদাহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও মাইকোপ্লাজমা দ্বারা হয়, যার কারণে ওলান ফুলে যায় এবং দুধ উৎপাদন কমে যায়।
কারণ
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, মাইকোপ্লাজমা ও ফাঙ্গাস এর কারণে গাভীর ম্যাসটাইটিস হয়ে থাকে।
Pseudomonas aeruginosa
Staphylococcus aureus
Staphylococcus epidermidis
Streptococcus agalactiae
Streptococcus uberis
Brucella melitensis
Corynebacterium bovis
Mycoplasma spp
Escherichia coli (E. coli)
Klebsiella pneumoniae
Klebsiella oxytoca
Enterobacter aerogenes
Pasteurella spp
Trueperella pyogenes
Proteus spp
Prototheca zopfii (achlorophyllic algae)
Prototheca wickerhamii (achlorophyllic algae)
ওলানের বাঁট অপরিষ্কার থাকা, গরু যে জায়গায় বসে সে জায়গাটা অপরিষ্কার থাকা, অপরিষ্কার হাত দিয়ে দুধ দোহন করানো, ওলান ওলানের বাঁট এর মধ্যে কোন আঘাত লাগলে ইত্যাদি কারনে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষণ
● অতি তীব্র রোগে ওলান হঠাৎ করে লাল হবে, শক্ত হবে ও ফুলে যাবে।
● হাত দ্বারা স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হবে।
● ওলানে প্রচুর ব্যথা থাকে, গায়ে জ্বর থাকে।
● পানির মতো দুধ, পুঁজ বা রক্তযুক্ত দুধ বের হবে।
● ওলানে পচন ধরতে পারে।
● গাভী খাদ্য গ্রহণ করবে না।
● অনেক সময় আক্রান্ত ওলানে গ্যাংগ্রিন হয়ে (ফুলে) যায়। গাভীর মৃত্যুও
হতে পারে।
● সেপটিসেমিয়া ও টাক্সিমিয়ার কারণে গাভী মারা যায়।
● দুধ কালো কাপড়ে ছাঁকলে জমাট বাঁধা দুধ ধরা পড়বে।
● দুধ উৎপাদন কমে যায়।
● দুধে ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে এবং দুধের উপাদান পরিবর্তিত হয়ে যায়।
চিকিৎসা
রোগ শনাক্ত হওয়ার পরপরেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। দেরি হলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। প্রদাহযুক্ত ওলানে ঠান্ডা পানির সেঁক দিতে হবে। উন্নতমানের Antibiotic ইনজেকশন এবং প্রদাহনাশক বা স্টেরওয়েড জাতীয় ইনজেকশন দিতে হবে।
লক্ষণ দেখা মাত্র দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রতিরোধ
● গাভীকে কাঁচা ঘাসসহ পুষ্টিকর সুষম খাদ্য দিতে হবে।
● গাভীর ঘর এবং বসার স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
● দুধ দোহনের আগে ওলান ধুয়ে নিতে হবে।
● জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করে গাভীর দুধ দোহানো।
● দোহনের পর কাঁচা ঘাস খেতে দিতে হবে।
● ওলান যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
● শেডের মেঝে পরিষ্কার করে ২-৩ দিন পর পর Disinfectant দিয়ে
Spray করতে হবে।
● বিজ্ঞান সম্মতভাবে গাভীর শেড বা ঘর তৈরি করতে হবে।
● কিছু দিন পর পর দুধ পরীক্ষা করে এ রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা দিতে হবে।
মোঃ নাজমুল ইসলাম লিজান
ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
ময়মনসিংহ - ২২০২
No comments