হিংস্র প্রাণী নেকড়ে
নেকড়ে অত্যন্ত হিংস্র প্রাণী বলে আমাদের সকলের নিকট পরিচিত। অত্যন্ত হিংস্র হলেও স্বভাবে তারা অনেক সুশৃঙ্খল হয়ে থাকে।
বৈজ্ঞানিক নাম Canis lupus ; Canidae গোত্রের সর্ববৃহৎ বুনো সদস্য। এদেরকে উত্তর আমেরিকা,ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকাতে পাওয়া যায়। এরা বনভূমি, মরুভূমি, পার্বত্য এলাকা, তৃণভূমি এমনকি শহুরে এলাকাতেও বাস করে।
প্রজাতির উপর নির্ভর করে এরা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।
নেকড়ে মাংসাশী প্রাণি। তারা যখন একায় থাকে তখন সাধারণত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের শিকাড়ে পরিণত হয়। কিন্তু যখন তারা দলবদ্ধভাবে থাকে তখন তারা বড় বড় প্রাণীকেও কাবু করতে সক্ষম।
নেকড়েরা ভ্রমণপিয়াসী। তারা এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে না। প্রতিদিন এরা প্রায় ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে।
নেকড়ে সাধারণত নিশাচর প্রাণী। তারা রাতের বেলায় খাবারে খোঁজে অনেক পথ পাড়ি দেয়। দিনের বেলাতেও সক্রিয় থাকতে পারে তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্রামে থাকে। একটি নেকড়ে একাই প্রায় ৯ কেজি পর্যন্ত খাবার খেতে পারে।
অত্যন্ত বুদ্ধিমান এই প্রাণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা না বললেই নয়। নিচে তাদের বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হলঃ
অলফ্যাক্টরি কমিউনিকেশনঃ নেকড়েদের উন্নত ধরনের সেন্স অব স্মেল রয়েছে। মাইলখানেক দূরে থেকেও তারা কোনো কিছুর গন্ধ শুঁকতে পারে। মূত্র এবং মলের মাধ্যমে তারা তাদের গতিপথ চিহ্নিত করে রাখে। এছাড়াও তাদের পায়ে একধরনের এক্সোক্রাইন গ্রন্থি রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা জানতে পারে ওই পথ দিয়ে কারা চলাচল করেছে।
ওরাল কমিউনিকেশনঃ নেকড়েদের বিভিন্ন ধরণের ডাক রয়েছে। নেকড়েরা মুখ উঁচু করে ডাক দেয়, এতে শব্দ অনেক দূর অবধি পৌঁছায়৷ নেকড়েরা বিভিন্ন কারণে এভাবে ডাক দেয়৷ এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, দলকে একত্রিত করা, সঙ্গীর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা, নিজের এলাকা ঘোষণা, শত্রুকে ঘাবড়ে দেয়া, সতর্ক সংকেত দেয়া বা নিজের অবস্থানের কথা জানানো৷
ভিসুয়াল কমিউনিকেশনঃ তারা তাদের বডি ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভূতি যেমন, ভয়, রাগ প্রকাশ করে থাকে।
একটি নেকড়ের দলকে 'প্যাক' বলা হয়। যেখানে ছয় থেকে দশ জন সদস্য থাকে। প্যাকগুলির একজন নেতা থাকে। যা ‘আলফা পুরুষ’ নামে পরিচিত। সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ এবং মহিলা জুটি প্যাকটি নেতৃত্ব দেয়। এক একটি নেকড়ের দল গড়ে দেড়শ থেকে তিনশ কিলোমিটার এলাকা দখলে রাখে।
নেকড়ে গৃহপালিত প্রাণীদের আক্রমণ করে। এই প্রবণতার কারণে মানুষ নেকড়ে মারতে দ্বিধাবোধ করে না। এছাড়াও পরিবেশগত পরিবর্তন, আবাসস্থল ধ্বংস এবং মানুষের নিপীড়নের কারণে এরা অনেক জায়গায় বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়েছে।
No comments